কবিতা : নারীদেহের রোজনামচা


সোমা ঘোষ মণিকা

০১ মার্চ ২০২৪ ইং
সোমা ঘোষ মণিকা


সোমা ঘোষ মণিকা:


তখন সবে মাত্র আমি সিক্সে,

ভোর রাতে জ্বর উঠল খুব করে

বুকের দুপাশে ব্যথা  চিনচিনে, 

দৌড়ে গেলাম ছোট কাকার ঘরে

কাকা কাকা দেখো কেমন যেন,

ফুঁড়া হয়েছে দুটো, বুকের উপরে।

কাকা চোখ টিপে হাসে,

মোলায়েম করে অঙ্কুরিত স্তন দুটো দিলো টিপে.....।


তারপর এখানে- সেখানে ভীড় ঠেলাতে

যে যেভাবে পারে স্তন দুটো দেয় চটকে।

যেন গরম ভাতে খাবে বলে, সেদ্ধ আলু নিচ্ছে চটকে।

গত বৈশাখে বড়োদিদির বিয়েতে নতুন জামাইবাবু

অষ্ট মঙ্গলায় এলেন বাড়িতে।

শুনেছি খুব ধনী আর শিক্ষিত, মার্জিতও বটে..

ভোর রাতে কেমন অবর্ননীয় এক অস্বস্তিতে

আমার ঘুম ভাঙে:

চোখ মেলে দেখি, আলো- আঁধারিতে,

জানি কারো বিশ্বাস হবে না, আমার কথাতে-

নতুন জামাইবাবু! তার ডান হাতটি ঢুকিয়ে দিলো,

আমার হাফ প্যান্টের ভিতরে।

আমাকে জাগতে দেখেই ধরল মুখটি চেপে,

রক্ত আঁখি তার শাসায় আমাকে।

যদি মুখ খুলিস, তবে দেখে নেবো তোকে...

আর বলা হয়নি কাউকে, মাঝে মাঝে ঘুম ভাঙে মাঝরাতে,

মনে হয় কে যেন, আমার পাজামাটি একটানে খুলে ফেলছে...

ঘুম ভাঙে, দেখি কেউ নেই চারিদিকে।


এভাবেই দিন কাটে, রাত কাটে

কলেজের বায়োলজির সৌমিত্র স্যার।

একদিন উনার ডেস্কে ডাকেন;

পিশাচের হাসি হেসে বলেন, এই ভাবে

যদি ফেল করতে থাকো,

 মেডিক্যালে পড়া এ জন্মে কি হবে?

তোমার বাবাকে বলো, আমি উনাকে ডেকেছি

শুনে বাবা বেদম মারলেন সেই রাত্রে।

স্যারের কাছে টিউশন নিতে পাঠালেন জোর করে,

মাস তিনেকের মাথায়, প্রেগ্ন্যাসির ট্রীপে ফুটে উঠল লাল দুটি দাগ..

মা মুখে আঁচল চেপে কাঁদে

অখ্যাত এক ম্যাটারনিটি ক্লিনিকে,

 নবজাতকের ভ্রুণ এলাম ছুঁড়ে।

ছুঁড়ে এলাম নারী সত্ত্বা,  ছুঁড়ে এলাম

সুখ স্বপ্ন,  মানুষ হয়ে বাঁচার অধিকার।

ফিরে এলাম নারী হয়ে,  একটাল রক্ত মাংসের স্তুপ। 


এভাবেই ভীড় ঠেলাতে স্তনে, নিতম্বে

হাত চলে হাজারে ,হাজারে,

একটা সময় অভ্যেস হয়ে যায়;

প্রেমিকের হাতের স্পর্শেও আর শিহরণ জাগে না


বাসর রাতেও দেহমনে কাঁপন উঠে না।

বাসে, ট্রামে, রাস্তায়, স্কুলে, হাসপাতাল কিংবা উপাসনালয়ে

কোথায় নারীর নিরাপত্তা মেলে??


যেখানেই যাও সেখানেই মাংসখেকো পিশাচের দল

দুমড়ে মুচড়ে নিংড়ে ফেলে।

যেন নারীদেহ এক মাংসপিণ্ড বৈ কিছু নয়

যে পিশাচ যত নারীকে খুবলে খুবলে খাবে

সে পিশাচ পুরুষ সমাজে তত মূল্যায়িত হবে।।


শুনরে ওরে ও পিশাচ, শুনরে নারীখেকো,

হায়েনার দল।


যেমন করে চেটেপুটে খাচ্ছিস অন্যের মা- বোনকে

তেমন করেই আরেক হায়েনা লুটেপুটে

নিচ্ছে তোর মায়ের সতীত্বকে।।

এ জগতে  কাপুরুষই সুযোগ পেলেই

মারে ছোবল।


যে বন্ধুর কাছে করছিস, নারীকে যৌন হয়রানির

বীরগাঁথা বর্ণন।

সেই বন্ধুর ২ মাসের ভ্রুণ

তোর আদরের বোনটি করছে এ্যাবরশন।

যে মায়ের বুকের আঁচলে খুঁজিস তুই স্নেহ অতল

সেই মায়ের স্তন জেড়া মাছ-বাজারে তোরই মতো কোন

নারীখেকো করছে মন্থন।। 


অন্যের মেয়ে, মা, বোন, পরস্ত্রী যেমন 

ভোগ্যবস্তু

তোর শ্রদ্ধা, স্নেহের মা, বোন, স্ত্রীও কারো চোখে

কামনার মাংস স্তূপ। 

তারাও জ্বলে, অঙ্গার হয়, হয় সামাজিক নির্যাতনের ভয়ে নিথর, নিশ্চুপ।।